নিউজ ডেস্কঃ- বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ কেমন হতে পারে, কারা আসবেন ক্ষমতায়, ক্ষমতাসীন দলের আসন সংখ্যা কেমন হতে পারে, নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কী হতে পারে এ নিয়ে যেমন আলোচনার ঝড় আছে, আছে প্রত্যাশার দোলাচল। অতি সম্প্রতি The Association of World Election Bodies (AWEB) নামক দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি জনমত জরিপ চালিয়েছে। বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩৫০০ রাজনীতি নিরপেক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে তারা এই জরিপ কার্যক্রম চালিয়েছেন। ২৯টি প্রশ্ন সম্বলিত ১টি ফরম সাধারণ ভোটারদের পূরণ করতে দেয়া হয়। তবে সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে কমপক্ষে ৫০০ জন করে বিভিন্ন পেশা ও বয়সের ভোটারের প্রত্যক্ষ সাক্ষাতকার ও ফরম পূরণ করেছেন সার্ভেতে নিয়োজিত শিক্ষার্থীগণ। কর্তব্য কর্মে যাতে অবহেলা না হয় সেজন্য ৪ জনের প্রতিটি টিমের জন্য ১ জন সার্বক্ষনিক মোবাইল ভিডিও কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। এই ভিডিওসহ তারা AWEB এর নিকট জরিপের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাদের নিয়োজিত শিক্ষার্থী কর্মীরা। প্রতি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ৫০ জনের সাক্ষাতকার গ্রহণের বাধ্যবাধকতায় অশিক্ষিত ভোটার চলে আসলে তাদেরকে প্রশ্ন শুনিয়ে ফরম পূরণে সহায়তা করেছে জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। কেমন সরকারের অধীনে নির্বাচন চান, কোন দলকে ভোট দিবেন, কেন ভোট দিবেন, বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সফলতা কী, বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় সফল কিনা, চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করার জন্য বর্তমান সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করা দরকার কিনা, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কোন দল কতগুলো আসন পেতে পারে, দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে ভাল ও নির্ভরযোগ্য দল কোনটি, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও কার্যকরী নেতা কে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কোন নেতার সামর্থ ও যোগ্যতা বেশী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করলে কোন দল বিজয়ী হবে, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে কোন দল বিজয়ী হবে ইত্যাদি প্রশ্ন সম্বলিত প্রায় ৬ মাসব্যাপী জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণপূর্বক চূড়ান্ত জরিপ সম্পন্ন করা হয় বলে জানিয়েছেন জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটির কর্তা ব্যক্তিগণ। উক্ত ফলাফলে উঠে এসেছে ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ-জাপা (এরশাদ) সমর্থিত মহাজোট ৪৫টি, বিএনপি সমর্থিত ঐক্যফ্রন্ট ২০টি এবং অন্যান্য দল ৫টি আসন লাভ করতে পারে। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪ জেলায় ২৪টি আসন রয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। আর ঐক্যফ্রন্ট ৪টি আসন পেতে পারে বলে জরিপে উঠে এসেছে। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় মোট ১৯টি আসন রয়েছে। তার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১০টি, ঐক্যফ্রন্ট ৯টি আসনে এগিয়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় ৫৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৩০টি, ঐক্যফ্রন্ট ২৬টি আসন এবং দুই জোটের বাইরে অন্যান্য দল ২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ২১টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ১৫টি, ঐক্যফ্রন্ট ৫টি ও ইসলামী একটি দল ১টি আসন আসন পেতে পারে বলে জরিপে উঠে এসেছে। খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩৬টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৫টি, ঐক্যফ্রন্ট ৯টি এবং অন্যান্য দল ২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ৩৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মহাজোট ২৫টি, ঐক্যফ্রন্ট ১২টি এবং অন্যান্য দল ২টি আসন পেতে পারে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৩৩টি আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ-জাপা (এরশাদ) নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২২টি, ঐক্যফ্রন্ট ৮টি এবং অন্যান্য দল ৩টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৩০০ আসনের মধ্যে জোটগত ভাবে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১৯২ টি আসন, বিএনপি সমর্থিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ৯৩টি আসন এবং অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলো ১৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। তাছাড়া, আসনভিত্তিক জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায় ৩০০ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এককভাবে ১৫৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে পক্ষান্তরে, বিএনপি ৮৭ টি এবং জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩১টি আসনে এককভাবে এগিয়ে রয়েছে।
জরিপের সার্বিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের প্রায় ৬৮ শতাংশ দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে ভাল ও নির্ভরযোগ্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে মত দিয়েছেন। পক্ষান্তরে তাদের ৩০% বিএনপি ও ২% অন্যান্য দলের পক্ষে মতামত প্রদান করেন। তাছাড়া, উল্লেখিত বয়সের তরুণ ভোটারদের ৭০ শতাংশই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও কার্যকরী নেতা হিসেবে সমর্থন করেন। বিপরীতক্রমে ৩০% তরুণ ভোটার খালেদা জিয়ার পক্ষে মত দেন। বর্তমান জাতীয় নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কার সামর্থ ও যোগ্যতা বেশী – এমন প্রশ্নে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭০% ভোটার শেখ হাসিনা, ১৫% ভোটার খালেদা জিয়া ও ১৫% ভোটার এরশাদকে সমর্থন করেন। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় সফল কিনা এমন প্রশ্নে ৭০% ভোটার ‘হ্যাঁ’, ২৭% ‘না’ ও ৩% ভোটার কোন প্রকার মতামত প্রদানে বিরত থাকেন। দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নে ৮০% ভোটার ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। চলমান উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করার জন্য বর্তমান সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করা দরকার কিনা এমন প্রশ্নে ৮৫% ভোটার ‘হ্যাঁ’যুক্ত মতামত প্রদান করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের সফলতা প্রশ্নে ৮৫% ভোটার কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন, অবকাঠামো ও পরিবহণখাতে উন্নয়ন, দরিদ্রতা নিরসন, নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতের উন্নয়ন, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, মেগাপ্রকল্প সমূহ (পদ্মাসেতু, পায়রা বন্দর, মেট্রোরেল ইত্যাদি) বাস্তবায়ন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবিরোধী অভিযান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ – কে পছন্দ করেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলো এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে কোন দল বিজয়ী হবে এমন প্রশ্নে ৭১% ভোটার আওয়ামী লীগ, ২৭% বিএনপি ও ২% অন্যান্য দলকে সমর্থন করেন। তাছাড়া আগামী নির্বাচন জোটগতভাবে হলে ৭০% আওয়ামী নেতৃত্বাধীন জোট ও ৩০% বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়লাভ করবে বলে জরিপে উঠে এসেছে। তবে ফলাফল যাই হোক দেশের উন্নয়নের স্বার্থে ধ্বংসাত্মক ও হানাহানির রাজনীতি পরিহার করে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা করেছেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারগণ।