১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রীতম-জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় সভা শেষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেনাবাহিনীর নাম জড়িয়ে এ হুমকি দেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সেনাবাহিনীর উদ্দেশে বলেন, ‘মনে রাইখেন আপনারা, নির্বাচন যদি সুষ্ঠুভাবে না হয়, আপনাদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ হইয়া যাইবে। এই যে একেকজন সাত/আট লাখ টাকা, ২০ লাখ টাকা আনেন, সেই সুযোগ-সুবিধা চলে যাবে। একজন সেনা সদস্যও আর স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন না। ক্যান্টনমেন্ট থেকে স্বাভাবিকভাবে বাহিরে বের হতে পারবেন না।’
সূত্র বলছে, ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিও’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে তা এর আগেও একাধিকবার প্রমাণ হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দেশবিরোধী নানা চক্রান্তে লিপ্ত থাকার বিষয়টিও নানা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
একটি অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তারেক রহমানের কাছ থেকে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বর্তমান সরকারকে অবৈধ উপায়ে পতন ঘটানোর চুক্তি করেছেন। তাই তিনি তার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর আড়ালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিতর্কিত গোয়েন্দা সংস্থার সাথে লিয়াজোঁ করে বর্তমান শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা থেকে সরানোর নীল নকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বাহিনীকে বিতর্কিত করতে চাইছেন।
এদিকে, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কিছুদিন আগে সেনাপ্রধানের নামে বানোয়াট ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপন করে বাহিনীর সুনামকে ক্ষুণ্ণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এবার তিনি সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মিশন বন্ধ হয়ে যাবার কথা বলে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। মূলত তিনি পরোক্ষভাবে বিভিন্ন সেমিনারে তার বক্তব্যে সেনা সদস্যদের জাতিসংঘ মিশনের যাত্রা বন্ধ হয়ে যাবে- এ ধরনের হুমকি দিয়েছেন। যাতে সাধারণ সৈনিকদের বিভ্রান্ত করে এর মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে পারে।
এসব বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এসব হুমকিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যরা ভয় পায় না। সেনা সদস্যরা দেশের জন্য কাজ করে। দেশকে ভালোবেসে কাজ করতে সেনা সদস্যরা নিবেদিত প্রাণ। শুধুমাত্র টাকার জন্যই সেনা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন না। নিজস্ব দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের জায়গা থেকেই সেনা সদস্যরা দেশসেবায় অংশ নেন। জাতিসংঘ মিশন বন্ধ হয়ে যাবার মতো বিষয়টি উপস্থাপন করা খুবই হাস্যকর একটি বিষয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গণস্বাস্থ্য ট্রাস্টের ডা. জাফরুল্লাহ সেনাবাহিনীকে ভুল পথে ব্যবহার করতে চান। তিনি মূলত তার বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় না এলে জাতিসংঘের মিশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমনটাই বলতে চেয়েছেন। এসব বক্তব্য দিয়ে তিনি সাধারণ সৈনিকদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো- সেনা সদস্যরা শুধু টাকার জন্য কাজ করেন না তারা দেশপ্রেম আর মানবিকতার জন্য কাজ করেন। নিজের মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করেন। সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য বর্তমানে যে সাবলীল জীবন-যাপন করছেন তাতে আগামীতে তারা কখনো ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হবেন না এমনটা শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়।
প্রসঙ্গত, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে একাধিক বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। যা দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের হেয় প্রতিপন্ন করার শামিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।