সিএইচটি টাইমস নিউজ ডেস্কঃ-আতঙ্কে বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনে অযোগ্য হবার আশঙ্কা,দ্রুত চলছে বিচার কাজ খালেদা জিয়ার মামলার রায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে। স্থায়ীকমিটির ১২ জন নেতার মামলা রায়ের কাছাকাছি। বিএনপির ছোট-বড় প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধেই বিচারাধীন রয়েছে অসংখ্য মামলা।অনেক মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে বিশেষ আদালতে।রায়ের অপেক্ষায় আছে কোনো কোনো মামলা।বর্তমানে সাজা আতঙ্কে ভুগছে দলটির শতাধিক নেতা।তার মধ্যে স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্যের মামলা রায় ঘোষণার পর্যায়ে রয়েছে।এনিয়ে দলের হাইকমান্ড আছেন দুশ্চিন্তায়।বিএনপির আইনজীবীরা জানান,দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ আড়াই শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধেই চলছে পাঁচ হাজারের বেশি মামলা।সারা দেশে বিএনপির প্রায় ৫ লাখ নেতাকর্মী মামলার আসামি।নিশ্চিত সাজা হতে পারে এমন কিছু ধারায় এ সব মামলা করা হয়েছে।হত্যা,বিস্ফোরণ, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনের পাশাপাশি মামলা হয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং তথ্য-প্রযুক্তি আইনে।রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলাও।আদালতে চার্জ গঠন হচ্ছে একের পর এক মামলার।বিএনপি চেয়ারপারসনসহ নেতারা অভিযোগ করছেন,সাজা দেয়ার জন্যই তড়িঘড়ি করে মামলা শেষ করা হচ্ছে।নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করে সরকার সংসদ নির্বাচন করতে চাচ্ছে।আইনজীবীরা জানান,খালেদা জিয়ার দুটি মামলার বিচার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।খালেদা জিয়ার ঘন ঘন আদালতের হাজিরার দিন ধার্য হওয়ায় চিন্তিত দলের নেতাকর্মীরা।প্রতি সপ্তাহেই তাকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে।তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩৫টি মামলা।এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ও অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষপর্যায়ে।সাক্ষ্যগ্রহণ শেষেই যুক্তিতর্ক।এরপর যে কোনো দিন রায়।নাইকো, গ্যাটকোসহ আরও কয়েকটি মামলার বিচার কার্যক্রমও চলছে পুরোদমে।জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতে সাজা হলে আইনি লড়াইয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন খালেদা জিয়া।ইতোমধ্যে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সাজা হওয়ায় আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ আপিলের ওপর নির্ভর করছে। তারেক রহমানকে এক মামলায় সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে শতাধিক মামলা।এক মামলায় সাজা হওয়ায় তারেক রহমানকে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হলে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে।তার পর জামিন চাইতে হবে।সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে রয়েছে কমপক্ষে ৫৪টি মামলা।দলের আইনজীবী নেতারা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ট্রাইব্যুনালেও অনেক মামলার বিচার চলছে।ওয়ান-ইলেভেনের পর দায়ের করা মামলা নিয়েও নেতারা উদ্বিগ্ন।উচ্চ আদালতে স্থগিত ওই মামলাগুলো ফের চালু হচ্ছে।এ ছাড়া আরও কিছু মামলা চালুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে সর্বমোট ৮৬টি মামলা রয়েছে।এর মধ্যে ৪২টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়। অন্য ৪৩টি মামলা তদন্তাধীন।সর্বশেষ ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্যে মানহানির মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে যান ফখরুল। এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে।আগামী ৩ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছে আদালত।মামলা হওয়া অন্য নেতাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৬টি মামলার সবকটিতেই চার্জশিট,ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ১৬টির মধ্যে ৯টিতে চার্জশিট,তরিকুল ইসলামের ৮টির ৫টিতে চার্জশিট,এম কে আনোয়ারের ৩০টির ১৮টিতে চার্জশিট,ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ২৬টির ১৪টিতে চার্জশিট,মির্জা আব্বাসের ৪৩টির ২৮টিতে চার্জশিট,গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ৩৫টির ১৮টিতেই চার্জশিট ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ৯টি মামলার মধ্যে ৩টিতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।এর মধ্যে দুর্নীতির মামলা বাতিল চেয়ে মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফের রিভিউ আবেদন খারিজ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।এর ফলে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিএনপির এ দুই সিনিয়র নেতার বিরুদ্ধে মামলা চলতে আর কোনো বাধা নেই।বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বেশ কিছুদিন নিখোঁজ থাকার পর অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক হন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে।সেখানে তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে।দেশে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ২৫টির মতো মামলা।কয়েকটির চার্জশিট হয়েছে।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ১৩ মামলা।একবার কারাভোগও করেছেন।বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের বিরুদ্ধে ৭০টির বেশি মামলা।২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে তিনি কারাভোগ করেছেন টানা ১০ মাস ১০ দিন।ভাইস চেয়ারম্যান ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রফেসর আবদুল মান্নান বর্তমানে ৩০ মামলার আসামি। মেয়র হিসেবে দেড় বছর দায়িত্ব পালনের পর প্রথমবার বরখাস্ত হন তিনি।এরপর দুই দফায় কারাভোগ করেন ২২ মাস।ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বর্তমানে কারাবন্দী। রাজধানীসহ নোয়াখালীতে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৬০টির বেশি মামলা।ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসি আইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু ওয়ান ইলেভেনের সময় বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাভোগ করেছেন সাড়ে পাঁচ মাস।আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ২২টি মামলা।কারাভোগ করেছেন দুই মাস।দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাব মহাসচিব ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪০টি মামলা।তিনিও কারাভোগ করেছেন কয়েকদফা।অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে। ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে ঢাকা এবং নোয়াখালীর বিভিন্ন থানায় রয়েছে ২২টি মামলা। ২০১৬ সালের ১৫ মে থেকে কারাভোগ করছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।রাষ্ট্রদ্রোহিতা,সন্ত্রাস বিরোধী,দ্রুতবিচারসহ নানা আইনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০টির বেশি মামলা।যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বর্তমানে ৩৭ মামলার আসামি। বর্তমান সরকারের আমলে তিন দফায় কারাভোগ করেছেন সাড়ে চার মাস।আওয়ামী লীগ আমলে তিনি কয়েকদফা কারাভোগ করেছেন।যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৬টি মামলা।বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে সর্বাধিক মামলার আসামি হলেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।ওয়ান ইলেভেনের সময় দুই বছর কারাভোগ করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ঢাকা ও নাটোরে দায়ের হয়েছে কমপক্ষে ৯০টি মামলা।এসব মামলায় দুই দফায় ২০ মাস কারাভোগ করেছেন।বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকারের সময়ে ২২ মাস ও আওয়ামী লীগ আমলে ৫ দফায় ১৮ মাস কারাভোগ করেছেন।আওয়ামী লীগ আমলে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বেশির ভাগ মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে তার নাম।বর্তমানে ২১৭ মামলার আসামি তিনি।দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন নবী খান সোহেল একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।২১৪ মামলার আসামি সোহেল এ সরকারের আমলে ৩ দফায় কারাভোগ করেছেন ১১ মাস।বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ১১২টির বেশি মামলা।গ্রেফতার হয়ে দেড় মাস কারাভোগ করেছেন তিনি।
এ ছাড়া সিনিয়র নেতাদের মধ্যে এম মোরশেদ খান,শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন,অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন,মেজর (অবঃ) হাফিজউদ্দিন আহমেদ,ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু,শামসুজ্জামান দুদু,অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন,ফজলুল হক মিলন,আবদুস সালাম আজাদ,নাজিম উদ্দিন আলম,মিজানুর রহমান মিনু প্রমুখ প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে ১০ থেকে ৪০টি করে মামলা।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য নীলনক্সা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে সরকার।তারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চাচ্ছে।এজন্য আদালতকে ব্যবহার করছে।সরকার বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন মামলায় দ্রুত সাজা দেওয়ার চেষ্টা করছে।সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।মামলার ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলাই ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।বিরোধী নেতাকর্মীদের হয়রানির জন্য মামলা দিয়ে কোর্টকাচারিতে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে রেখেছে সরকার।মামলার কারণে বিএনপি নেতাদের আগামী নির্বাচনে কিছু সমস্যা হতে পারে। দলের নেতাদের মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন,সরকার যেভাবে আদালতকে ব্যবহার করছে তাতে আগামী নির্বাচনের আগে অনেকের মামলার রায় দেওয়া হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন,কেন্দ্রীয় এবং সারাদেশের জেলা পর্যায়ের অন্তত দুই শতাধিক নেতার নামে ইতোমধ্যে একাধিক মামলায় চার্জশিট হয়েছে।বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই হয়ে যাবে।(((ইত্তেফাক)))
Publisher - Lutfur Rahman (Uzzal)
Published By The Editor From chttimes (Pvt.) Limited (Reg.No:-chttimes-83/2016)
Main Road,Gurosthan Mosque Market, Infront of district food Storage, Bandarban hill district,Bandarban.
Phone - News - 01673718271 Ad - 01876045846
Copyright © 2024 Chttimes.com. All rights reserved.