পবিত্র শবে বরাত এর রাত মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত। একটি পবিত্র মহিমান্বিত ও তাৎপর্যময় রাত। শবে বরাত একটি ফার্সি শব্দ। শবে শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত আর বরাত শব্দের অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী। একে আরবি তে বলা হয় লাইলাতুল বরাত। লাইলাতুল মানে রাত আর বরাত মানে সৌভাগ্য রজনী। আবার বারাআত শব্দের অন্য অর্থ হচ্ছে মুক্তি, নাজাত,নিস্কৃতি প্রভৃতি। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এ রাতকে লাইলাতুল নিস ফি মিন শাবান অথাৎ অর্ধ শাবানের রাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই রাতে মুমিন বান্দাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়।
মুসলমানদের কাছে তথা পুরো বিশ্বের মুসলিমদের কাছে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত বা রজনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বরকতময় এবং মহিমান্বিত বলে বিবেচিত। এ রাতে তামাম বিশ্ব মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের কাছে বিগত দিনের গুনাহ মাফের জন্য, অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা মানব জাতির জন্য তার অসীম রহমতের দরজা এ রাতে খুলে দেন।
হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা শবে বরাতের রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে অবতরন করেন তার বান্দাদের ঘোষণা দিতে থাকেন। কে আছো আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কেউ রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেবো। আছে কেউ বিপদাপন্ন? আছে কেউ তওবাকারী? আমি তাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবো, আমি তাদের তওবা ক্ষমা করবো। এইভাবেই আল্লাহ পাক সুবেহ সাদিক অথাৎ ফজর পযর্ন্ত তার বান্দাদেরকে আহবান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী, মিসকাত শরীফ)
হাদিস শাস্ত্রে শবে বরাত বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো লাইলাতুল নিসফি মিন শাবান তথা শাবানের মধ্যবর্তী রজনী। একটি হাদিসে বলা হয়েছে – রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে আত্নপ্রকাশ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তার সৃষ্টির সকল কে ক্ষমা করেন। সহীহ হাদিস।( ইবনে নাজাহ,আস সুনান ১/৪৪৫) সহ একাধিক হাদিসে এটি বর্ণিত হয়েছে।
যথাযথ মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর এই মহিমান্বিত রাত টি পালিত হয়ে থাকে। মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাত হচ্ছে লাইলাতুল বরাত। এ রাতে আমরা আল্লাহ পাকের দরবারে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি। নফল নামাজ, কবর জিয়ারত, কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়েই পার করে থাকি। মসজিদে বিশেষ বয়ান হয়ে থাকে। কিন্তু এবার সেটি হচ্ছে না। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে এই বছর মসজিদে দলবেধে ইবাদত বন্দেগি করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু বাসায় আমরা আল্লাহ তায়ালা র কাছে অতীতের সকল ভুল ভ্রান্তি র জন্য, গুনাহ মাফের জন্য রাত জেগে বিশেষ প্রার্থনা করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন এই কোভিড ১৯ এই মহামারী থেকে আমাদের সকলকে রক্ষা করেন, আমাদেরকে মাফ করেন, আমাদের উপর তার অবারিত রহমত নাযিল করেন। আমরা আমাদের প্রভুর নিকট বেশী বেশী করে নফল নানাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে, জিকির আযকার করে ক্ষমা চাইবো। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেন, আমিন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদকঃ জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি ও পুলিশ কর্মকর্তা।