অবৈধ সিগারেটে সয়লাব, উপেক্ষিত রাজস্ব বোর্ডেরনির্দেশ, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়ন


প্রকাশের সময় :২ নভেম্বর, ২০১৮ ১১:৪৯ : অপরাহ্ণ 609 Views

বান্দরবান অফিসঃ-সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যেসিগারেট বিক্রির ফলে যুব ও দরিদ্র শ্রেণীর জনস্বাস্থ্যহুমকির মুখে। সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যে উদ্দেশ্যেতামাক নিয়ন্ত্রণ আইনসহ নানা পলিসি তৈরি করেছেনবিশেষ করে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি এবং প্যাকেটেরগায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করেও অসাধুতামাক কোম্পানীর কারণে সরকারের সে উদ্দেশ্যসম্পূর্ণ বিফলে যাচ্ছে। ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাঅর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে বক্তারা মতবিনিময় সভায় তুলে ধরেন।আজ বিকেলে অনলাইন মিডিয়া ফোরামসম্মেলন কক্ষে, অনলাইন মিডিয়া ফোরাম, এলায়েন্সফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ, এবংবাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সম্মিলিতউদ্যোগে “এসডিজি’রলক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাকেরঅবৈধ বানিজ্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ”শীর্ষকমতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। অনলাইনমিডিয়া ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী শরীফমোহাম্মাদ মাসুম এর সভাপতিত্বে উক্ত সভায় প্রধানঅতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারদক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ও এলায়েন্সফর এফসিটিসি ইমপ্লিমেন্টেশন বাংলাদেশ এরসমন্বয়কারী অধ্যাপক ডাঃ মোজাহেরুল হক, বিশেষঅতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অনলাইন মিডিয়াফোরামের , বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের বোর্ডঅব ট্রাস্টি এম রফিকুল ইসলাম মিলন, বাংলাদেশতামাক বিরোধী জোটভুক্ত সংগঠন নিরাপদডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদরানা, এলআরবি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালকসুলতানা রাজিয়া শিলা, জনস্বার্থ ফাউন্ডেশনেরচেয়ারম্যান ডিএম সাকলায়েন প্রমুখ। এছাড়াওঅনলাইন মিডিয়া ফোরামের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডাঃ মোজাহেরুলহক বলেন , মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার এক বক্তব্যে২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিদিয়েছেন। সরকার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা বাস্তবায়নেধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। ধূমপানের ব্যবহারনিরুৎসাহিত করণে এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতি বছরইসিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করছে। চলতি বছরের বাজেটেপ্রতি ১০ শলাকা সিগারেট প্যাকেটের সর্বনি¤œ খুচরামূল্য নির্ধারণ করেছে ৩৫ টাকা। যার মধ্যে ভ্যাট এবংট্যাক্স প্রদান করতে হয় প্রায় ২৫ টাকা অর্থাৎ সরকার৩৫ টাকা মূল্যের প্যাকেট থেকে রাজস্ব পাবে ২৫টাকা। অথচ দেশের কতিপয় অসাধু তামাক কোম্পানীরাজস্ব না দিয়ে ৩৫ টাকা মূল্যের সিগারেট বিক্রিকরছে মাত্র ১২ থেকে ২০ টাকা যা জনস্বাস্থ্যের জন্যযেমন ক্ষতিকর তেমনি রাজস্ব আইনে দন্ডনীয়অপরাধ। এর ফলে জনস্বাস্থ্য যেমন হুমকির মুখেপড়ছে তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে।বিশেষ অতিথি জনাব ইবনুল সাইদ রানাক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরনেরএকমাত্র উপায় এ সকল কোম্পানীকে আইনগত ভাবেসীলগালা করে বন্ধ করে দেয়া। তিনি আরও বলেনজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্ররংপুরের ৫টি সিগারেট ফ্যাক্টোরী থেকে প্রতিবছররাজস্ব আসার কথা ২২৬ কোটি টাকা যেখানে আসছেমাত্র ১৬ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। রংপুর সহ দেশেরবিভিন্ন স্থানের তামাক কোম্পানীগুলো সরকারেরট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে এবং তরুন, যুব ও নি¤œ আয়েরমানুষের জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে ব্যাপকমুনাফা অর্জন করছে। বিশেষ করে অতি সস্তায় অবৈধপন্থায় সিগারেট বিক্রি করে জনসাধারণকে বিড়ি-সিগারেটে আসক্ত করার প্রতিযোগীতায় নেমেছে।অবিলম্বে এ সকল কোম্পানীর অশুভ প্রতিযোগীতাবন্ধ করার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।সভাপতির বক্তব্যে জনাব শরীফ মোহাম্মাদ মাসুম বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে এ বৈশ্বিক সমস্যাসমাধানকল্পে বিশ্বব্যাপী  তামাকের চোরাচালাননিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের নভেম্বরে Protocol to Eliminate Illicit Trade in Tobacco Products নেগোশিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ চুক্তিচুড়ান্ত করা হয়। উল্লেখ্য, এই প্রটোকল বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার FCTC-র অধীন প্রণীত প্রথম প্রটোকল।এফসিটিসির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ হয়েও প্রটোকলপ্রনয়নের প্রায় ৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেওবাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এ প্রটোকল স্বাক্ষর না করায়সভায় বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ এচুক্তি স্বাক্ষর করলে নকল সিগারেট, ব্যান্ডরোল বিহীনসিগারেট ও তামাকের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ হওয়ারপাশাপাশি সরকারের রাজস্ব যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনিতামাকের ব্যবহার হ্রাস পাবে ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নঘটবে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।বক্তারা আরও বলেন প্রতিবছর তামাকেরকারণে বাংলাদেশে ১ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে এবংপ্রায় ৪ লক্ষ লোক পঙ্গুত্ব বরণ করে। এ কারণেজনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার প্রতিবছর সিগারেটেরব্যবহার হ্রাসকল্পে এর মূল্য বৃদ্ধি করছে। তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে মোবাইলকোর্ট অব্যাহত রাখাসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমটেকসই করতে সারচার্জ ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নসহনানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অথচ অবৈধ ও নকলসিগারেট ও সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও কমমূল্যে বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায়সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ পলিসি কোন কাজেআসছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যেবাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ারপ্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নকরতে হলে অবৈধ সিগারেট সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করারকোন বিকল্প নেই।উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা অবিলম্বে অবৈধ সিগারেট বন্ধে তামাকের ফ্যাক্টরী গেইটে ব্যান্ডরোলমনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, নকল সিগারেটউৎপাদনকারী অবৈধ কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করেসকল মেশিনারিজ ধ্বংস ও কঠোর শাস্তি প্রদানেরমাধ্যমে এগুলি সীলগালা করে বন্ধ করা, নকলসিগারেট বন্ধে সিগারেট কোম্পানীকে ভ্যাট দেয়ারপূর্বে তার সকল ট্রেড মার্ক আইন রক্ষা করে কিনা তাযাচাই করে দেখা, প্রতিটি সিগারেট প্রস্তুতকারকপ্রতিষ্ঠান সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস হতে ট্যাক্স স্ট্যাম্পসংগ্রহ করছে কিনা তার তালিকা সংগ্রহ ও কঠোরনজরদারি করা এবং সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষযেমন- কাষ্টমস্, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও প্রশাসনেরসমন্বয়ের মাধ্যমে নকল এবং ব্যান্ডরোল বিহীন সিগারেট বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
November 2024
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!