বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের সদস্য তুহিন ওয়াদুদ!


প্রকাশের সময় :২৭ মে, ২০১৮ ৭:৩৫ : পূর্বাহ্ণ 1090 Views

সিএইচটি নিউজ ডেস্কঃ-বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় রংপুর বিভাগের একমাত্র পুর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে ২০০৯ সালে নারী জাগরনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের স্মরণে নাম পরিবর্তিত হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যার বিরুদ্ধে নিয়ম ভঙ্গ করে নিয়োগ প্রাপ্তি, দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী জামায়াতের অর্থায়নে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা, নদী রক্ষার নামে প্রভাবশালী ও দখলদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়া, ছাত্রীদের সঙ্গে অনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ)। তার নানা অপকর্মের ফিরিস্তি নিয়ে ভোরের পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে পঞ্চম পর্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রজীবনে শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকলেও সুযোগ বুঝে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করা শুরু করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান ওরফে তুহিন ওয়াদুদ। শিক্ষা জীবনের সকল স্তরে দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েও নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন তিনিই কৌশলে তাদের মাদার সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য পদ বাগিয়েছেন। যেটি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৯ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ২০০৯ সালের ৪৭ নম্বর আইন এর ধারা-৪ অনুযায়ী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে কর্মরত কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। অথচ ছাত্রশিবির কিংবা জামায়াতের রাজনীতির আড়ালে তুহিন ওয়াদুদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় সংগঠনের অর্থ ও পরিকলল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য হয়েছেন।

জানা যায়, রাজশাহীতে পড়াশুনা করাকালীন তৎকালীন রাবি শিবির নেতা ও বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আজিজুর রহমান স্বপন-এর সহচর হিসেবে কাজ করতেন তুহিন ওয়াদুদ। তাঁর যোগাযোগ রাখার কথা স্বীকারও করেছেন আজিজুর রহমান স্বপন।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিভিন্ন বক্তব্যে আশংকা প্রকাশ করে থাকেন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের কিছু অনুপ্রবেশকারী তাদের সংগঠনে কৌশলে ঢুকে পড়েছে। শিক্ষা জীবনের কোনো পর্যায়েই প্রথম শ্রেণীর দেখা না পেয়েও বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভঙ্গ করে ২০০৯ সালের প্রথম দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের শিক্ষক বনে যাওয়া তুহিন ওয়াদুদ প্রথম দিকেই খোলস বদলানো শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রংপুর শহরে নানা প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়া শুরু করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি তাঁর আসল চেহারা নানা ভাবে প্রকাশ করা শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশৃংখলা তৈরির চেষ্টা করেন তিনি। এসময় তাঁর নের্তৃত্বে তৎকালীন উপাচার্যের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চলছিল। ঐতিহাসিক এই দিনে চতুর তুহিন ওয়াদুদ ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে এসিড নিক্ষেপের অভিনয় করে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে জোরদার করেন। এতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, রংপুরের কোতয়ালী থানায় নিজে বাদী হয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মামলা করলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠান। অথচ চোখে এসিড নিক্ষেপের অভিনয় করলেও তাঁর চোখে কোনো ধরনের এসিডের আলামত পাওয়া যায় নি। কারণ এসিডের মতো দাহ্য বস্তু কারো চোখে পড়লে চোখের অনেক বেশি ক্ষতি হওয়ার কথা ছিল। এসিড নিক্ষেপের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়কে সামনে এনে যেসব ছাত্রলীগ নেতাকে আসামি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি আবু মোন্নাফ আল তুষার কিবরিয়াও ছিলেন।

এছাড়াও অন্য যাদের আসামি করা হয়েছিল তাঁরা হলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান চৌধুরী শিশির, সাবেক সহ-সভাপতি হাদীউজ্জামান হাদি, মোহাম্মদ আলী রাজ, রোকনুজ্জামান রোকন, শিহাব উদ্দিনসহ কয়েকজনকে। এদের মধ্যে সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির, সহ-সভাপতি হাদীউজ্জামান হাদি এবং মোহাম্মদ আলী রাজকে দুই মাসের বেশি জেলে থাকতে হয়েছিল।ওই ঘটনায় এখনো ছাত্রলীগের অনেক নেতা কর্মীকে অনেক সময় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে এই মামলায় পর্যুদস্ত হয়ে আর লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি সাবেক সভাপতি শিশির, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী রাজকেও এক বছর ড্রপ করতে হয়েছিল এবং হাদীউজ্জামানও কোনোমতে পড়াশুনা শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।ছাত্রলীগের মতো সংগঠনকে যিনি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করেছেন তিনিই কিনা আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হয়েছেন। সেটিও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করে! বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেন নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘণ করে সরাসরি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলেও তুহিন ওয়াদুদ ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রতিষ্ঠানের আইন ভঙ্গ করে যদি কেউ এমন পদ ভাগিয়ে নেন, তাহলে তা খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি পেশাজীবী সংগঠনের হয়ে কাজ করতে পারেন। আর তার বিরুদ্ধে যেহেতু ছাত্র শিবির ও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে, তাই বিষয়টি নিয়ে দলীয় ফোরামে কথা বলবো।…(চলবে…)

উৎপল দাশ (ভোরের পাতা)

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
September 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!