খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :৫ অক্টোবর, ২০২২ ৮:৫৩ : অপরাহ্ণ 440 Views

খাদ্য দুষ্পাপ্য হওয়ায় অপুষ্টিজনিত রোগব্যাধি যেমন বাড়বে, তেমনি মানুষের মধ্যে পুষ্টিহীনতাও বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা খাদ্য নিরাপত্তার বড় ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে এই ঝুঁকিতে বাংলাদেশ নেই। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত ‘হালনাগাদ খাদ্য নিরাপত্তা সূচক’ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কোন দেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোও তুলে ধরেছে। ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলো যাতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে সেজন্য তারা কিছু সুপারিশও করেছে প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানি সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। ২৯ জুন থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া ভারতসহ আরও অনেক দেশ নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য খাদ্যসামগ্রী রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।

এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করছে না বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এ ধরনের ৫টি সংস্থা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিশ্বব্যপী খাদ্যপণ্য রপ্তানি ও পরিবহণে নতুন এসব বাধা অপসারণের প্রস্তাব করেছে। একই সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি কমাতে ধনী দেশগুলোকে খাদ্য সহায়তা বাড়ানো ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থা গতিশীল করার তাগিদ দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশকেও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট আগামীতে আরও বাড়বে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বিশ্বব্যাপী বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে এ ঝুঁকি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কেননা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহে সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পাইপে লিকেজ দেখা দিয়েছে। এতে গ্যাস সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গ্যাস থেকে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম উপকরণ সার উৎপাদিত হচ্ছে না। বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ ইউরিয়া সার ইউরোপ থেকে সরবরাহ করা হয়। গ্যাসের সংকটে একদিকে সারের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বাড়ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। এতে কৃষিপণ্যের দামও বাড়বে।

তবে গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে কৃষিপণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৩ শতাংশ কমেছে। কিন্তু আগামীতে এর দাম আবার বাড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বল্প, মধ্য ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখনও অনেক বেশি। এ হার বেড়েই চলেছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়তে পারে। কয়েকটি দেশে এ হার বেড়ে খাদ্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। ৮৮ শতাংশ স্বল্প আয়ের দেশে, ৯১ শতাংশ মধ্য আয়ের দেশে ও ৯৩ শতাংশ উচ্চ আয়ের দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখন ৫ শতাংশর উপরে রয়েছে। এসব দেশে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ডাবল ডিজিটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ইতোমধ্যেই অনেক দেশে এ হার ডাবল ডিজিট অতিক্রম করেছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে যে ১০টি দেশ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, জিম্বাবুয়েতে ৬৮ শতাংশ, লেবাননে ৩৬ শতাংশ, ইরানে ৩২ শতাংশ, শ্রীলংকায় ২২ শতাংশ, হাঙ্গেরি ১৮ শতাংশ, কলাম্বিয়া ১৫ শতাংশ, জিবুতি ১৪ শতাংশ. রুয়ান্ডা ১৪ শতাংশ এবং বুর্কিনা ফাসোয় ১০ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে কঙ্গো, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, সুদান, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, হাইতি, নাইজার, কেনিয়া, মালাউ, বুর্কিনা ফাসো, জিম্বাবুয়ে গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, আফিকান রিপাবলিক, চাদ, মাদাগাস্কার এবং মালি। এসব দেশের অনেক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তায় ভুগবে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকবে। এর প্রভাবে দারিদ্র্য বাড়বে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
September 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!