পিছু হটছে কেএনএফঃ রুমা-রোয়াংছড়ি সড়ক নির্মান কাজ বন্ধ থাকায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশের সময় :২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১:৩৮ : পূর্বাহ্ণ 546 Views

রোয়াংছড়ি উপজেলা ও এর আশেপাশের বিপুল সংখ্যক এলাকা কেএনএফ মুক্ত করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।তবে সেনাবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে কেএনএফ সদস্যরা এসব এলাকা থেকে পালিয়ে গেলেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন সড়ক ধ্বংস করে দিয়েছে।এতে এলাকাবাসীসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সামষ্টিক কার্যক্রম পরিচালনায় নতুন আরেকটি সংকট সৃষ্টি করেছে।সরেজমিন পরিদর্শনে এমন দৃশ্যেরই দেখা মিলে।ক্যপ্লং পাড়া হয়ে পাইক্ষ্যং পাড়া পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশের মাটি সরিয়ে দিয়ে যোগযোগ অনুপোযোগী করে দিয়েছে কেএনএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা।এতে বিপাকে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারন।

ক্যপ্লং পাড়া ও পাইক্ষ্যং পাড়ায় বসবাসরত স্থানীয়রা বলছেন,আমাদের চলাচলের একমাত্র সড়কটি অতি দ্রুত মেরামত করে দেয়া হউক।সড়কটি মেরামত করা না গেলে পাইক্ষ্যং পাড়াসহ অত্র এলাকায় কুকিচিন সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম নির্মূল করা কঠিন হয়ে পরবে।জানা যায় সুনশান নিরব নিস্তদ্ধ হয়ে পরা এই পাড়া গুলো বছরখানেক পুর্বেও ছিলো প্রানবন্ত।কিন্তু কেএনএফ এর সন্ত্রাস এসব দুর্গম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে।কুকিচিন সন্ত্রাসীদের ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্যপ্লং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পড়াশোনা স্থবির হয়ে পড়েছে।পাড়ার খিয়াং ও বম সম্প্রদায়ের শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায় কুকি বাহিনীর ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেনা।অনেক দিন ধরে স্কুলে যেতে মন চাইলেও স্কুলে যেতে পারে না।শিক্ষকরাও প্রান ভয়ে পাঠদান কার্যক্রমে বিরত রয়েছেন।

তবে আশার কথা হলো সেনাবাহিনীর নিয়মিত অভিযানের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে কেএনএফ সন্ত্রাসী বাহিনী।এক সময় রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাং পাড়া,দুর্নিবার পাড়া,ক্যাপ্লাং পাড়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের শক্ত অবস্থান ছিলো।তবে সন্ত্রাসীরা অনেকটাই পিছু হটছে।কোণঠাসা দলটি আশ্রয় নিয়েছে ক্যপ্লং পাড়া ও এর আশেপাশের দুর্গম পাহাড়ে অরন্যে।স্থানীয়দের মতে,গত কয়েক মাসের তুলনায় বর্তমানে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের কিছু দূর পর পর সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।সড়কটি কঠোর নজরদারী তে রাখায় সন্ত্রাসীরা অনেকটায় বেকায়দায় রয়েছে।

দুর্নিবার পাড়া থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত খামতাং পাড়া এলাকাতেও বিরাজ করছে একই অবস্থা।নিরাপত্তা বাহিনী সুত্রে জানা যায়,কয়েক দিন আগে পাড়াটি কেএনএফ সন্ত্রাসী মুক্ত হয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খামতাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর এক শিক্ষিকা জানান, কুকি বাহিনীর সহিংসতার পর স্কুল খোলা থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে এবং আতঙ্কিত হয়ে স্কুলে আসতে পারছে না।এই বিদ্যালয়ে ৫৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত।তাছাড়া প্রান ভয়ে গ্রামের লোকজন এখন শহরমুখী।রোয়াংছড়ি সদরে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসা ভাড়া করে জীবিকা নির্বাহ করছে এবং সেখানেই তাদের পড়াশোনা চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।স্থানীয় সত্তুর্ধ এক বয়োবৃদ্ধা জানান,কয়েক মাস আগেও আমাদের পাড়ায় ৮৪টি পরিবার বসবাস করতো।কুকি বাহিনীর ভয়ে ৩৪টি পরিবার খামতাং পাড়া ছেড়েছে।সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা আমাদের পাড়ায় ফিরেছি।এখন শান্তিতে বসবাস করতে চাই।

এদিকে জনসাধারন কে ভয় ভীতির প্রদর্শন করেই ক্ষান্ত হয়নি কেএনএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা একই সাথে সীমান্ত সড়কের চলমান কার্যক্রম বিঘ্নিত করতে দুটি উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন স্কেভেটরের বিপুল যন্ত্রাংশ ধ্বংস করে দিয়েছে।এতে স্কেভেটর এর ইঞ্জিন লাইনের সমস্ত ওয়্যারিং কেটে দেয়।এবিষয়ে স্কেভেটর শ্রমিক মো.শামীম ও মাসুদ রানা জানিয়েছেন, কুকিচীন সন্ত্রাসীরা তাদের দুইজনকেই হেফাজতে নিলেও পরে আবার ছেড়ে দেয়।তবে তারা সীমান্ত সড়কে কাজ করতে দিবে না বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে।

তবে আশার কথা হলো নিরাপত্তা বাহিনীর দফায় দফায় সাড়াশি অভিযানের প্রেক্ষিতে শতাধিক পাড়া কেএনএফ সন্ত্রাসী মুক্ত হয়েছে।গেলো এক বছরে যেসব পাড়াবাসী এলাকা ছেড়েছে তাদের অনেকেই পাড়ায় ফিরতে শুরু করেছে।সেনাবাহিনী’র অস্থায়ী চেকপোস্ট ও নিরাপত্তা টহল জোরদারসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন তৎপরতায় পাড়াবাসী অনেকটাই নিরাপদবোধ করছে বলে জানিয়েছে এসব এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা।এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পর্যটন সংশ্লিষ্টরাও ব্যবসা শুরু করার আশায় নতুন করে বুক বেধেছে।

রোয়াংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেকাটাই উন্নতি হয়েছে।ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।আগের তুলনায় এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে এনেছে সেনাবাহিনী।এলাকার শান্তি-শৃংখলা রক্ষায় তারা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন।তবে রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।এসময় তিনি আরও বলেন, এখানকার শতশত মানুষ পর্যটনের উপর নির্ভরশীল।পর্যটন বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

এবিষয়ে বান্দরবান সেনা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কঃ মাহমুদুল হাসান,পিএসএসি বলেন,বর্তমানে অত্র এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে।কুকিচিন তাদের অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে।এই মুহুর্তে বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি পাইক্ষ্যং পাড়ায় কুকিচিন অবস্থান করছে।এছাড়াও বিভিন্ন পাড়ায় জনসাধারনের সাথে মিশে গিয়ে অবস্থান করছে।তবে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতায় স্থানীয় সাধারন জনগন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে।

জোন কমান্ডার বলেন,অত্র এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মুহুর্তে বিশেষ কোনও অভিযান পরিচালনা করছে না।অপারেশন উত্তোরনের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এর স্বাভাবিক নিয়মিত কার্যক্রম এর অংশ হিসেবে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি-রুমা সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অত্র এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।স্থানীয় জনসাধারন নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে সন্তুষ্ঠি প্রকাশ করছে।তিনি বলেন,নিরাপদ পরিবেশ এর পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট কেটে গেলে দ্রুত সময়ের ভেতর একটি পর্যটক বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং পর্যটনের যে স্থবিরতা বিরাজ করছে এটাও অনেকটাই দুর হয়ে যাবে।

এবিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত বলেন,নিরাপত্তাজনিত এবং পরে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে সড়কটির উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।তবে রুমা অংশে কাজ চলছে।সড়ক উন্নয়নের বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজটি শুরু করা হবে।

ট্যাগ :

আরো সংবাদ

ফেইসবুকে আমরা



আর্কাইভ
December 2024
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
আলোচিত খবর

error: কি ব্যাপার মামা !!