দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে নতুন চুক্তিতে উপনীত হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। চুক্তিটির নাম দেয়া হয়েছে- কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা)। এটি দুই দেশের অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে নতুন মাত্রা যোগ করবে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা সাফটার অধীনে বাণিজ্য হচ্ছে। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশ ভারতের কাছ থেকে আরও কিছু বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যেমন বাড়ছে তেমনি ভারতে বাংলাদেশের রফতানিও গতি পেয়েছে।
প্রথমবারের মতো গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি দুইশ’ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, নতুন চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ভারতের বাজারে আরও বেশি সুবিধা পাবে। বাণিজ্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী মাসে ভারত সফরে যাচ্ছেন। তার ওই সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে সেপা স্বাক্ষরের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর ভারতে রফতানিসহ বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে বাংলাদেশের আগ্রহে এই চুক্তি হতে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তির ব্যাপ্তি অনেক বেশি হওয়ায় চলমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে এটির অনেক ভিন্নতা রয়েছে। এটি স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের বাণিজ্যই শুধু বাড়বে না, উন্মুক্ত হবে বিনিয়োগের নতুন দরজা। এছাড়া নতুন এই চুক্তিতে পণ্য ও সেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ব ও ই-কমার্সের মতো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ দিনের সফরে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লী যাচ্ছেন। প্রায় তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিবেশী দেশে সফর নানা কারণে গুরুত্ব বহন করছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচীর খুঁটিনাটি দিক চূড়ান্ত করতে পররাষ্ট্র দফতর ও রাষ্ট্রাচার প্রধানের দফতরে প্রতিনিয়ত বৈঠক হচ্ছে।
তারা চাইছেন, এই চুক্তিতে অশুল্ক বাধা স্পষ্টীকরণ। কারণ, অশুল্ক বাধার কারণে ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ভারতে বাংলাদেশের রফতানি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি। যদিও গত কয়েক বছর ধরে ভারতে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি বাড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে ১২৮ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি হয় ১০৯ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতে ১২৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল বাংলাদেশ। সে তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে ৫৫.৬২ শতাংশ বেশি রফতানি হয়েছে ভারতে। এতে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হলেও কমেছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯৮৭ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ওই বছর ১২৭ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে ভারতে। দেশটি থেকে আমদানি হয়েছে ৮৫৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দুটি দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। ভারতে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির বিপরীতে আমদানি হয় ৫৭৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের পণ্য। ওই বছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৪৬৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার।
নতুন চুক্তি প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, সাফটার আওতায় বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রেখে কমপক্ষে ১০ বছর আরও বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়া অশুল্ক বাধা যাতে দূর করা হয়, সে বিষয়টি সেপা চুক্তিতে থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রফতানির তুলনায় তাদের পণ্য আমদানি বেশি হয়ে থাকে। তাই চুক্তিতে অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে স্পষ্টীকরণ থাকতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের দিক থেকেই এই চুক্তির প্রস্তাবটি ছিল। উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশ ভারত থেকে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্যই সেপা চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ। বিশ্বের অনেক দেশেই কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা/সিইপিএ) আছে। ইইউ দেশগুলোর মধ্যেও এই চুক্তি রয়েছে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে প্রস্তাবিত সেপা চুক্তির বিষয়ে এফবিসিসিআই একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটি সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেখানে সাফটা বাণিজ্যর শর্ত আরও বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর ভিত্তিতে সেপা স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয় ভারত। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আরেকটি বৈঠকে উভয়পক্ষ এই চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মত হয়। পণ্য, সেবা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের জন্য এটি ভাল ভিত্তি হবে বলে একমত হন তারা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ চুক্তি উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক হবে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কি থাকছে সেপা চুক্তিতে ॥ সেপা চুক্তিতে দুই দেশের মধ্যকার পণ্য বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ রয়েছে, যা থেকে দ্বিপাক্ষিক সেবা বাণিজ্যও উপকৃত হবে। কারণ তখন পরিবহন, বীমা, ব্যাংকিং সেবা, টেলিযোগাযোগ ও বিতরণসহ বিভিন্ন বাণিজ্য সহায়ক সেবার প্রয়োজন তৈরি হবে।
এই চুক্তির আওতায় যেসব খাতে বাংলাদেশ ভারতে সেবা রফতানি করতে পারবেÑ পেশাদারি সেবা, আইটি/ টিইএস সার্ভিস, অবকাঠামো ও তদসংশ্লিষ্ট সেবা, আর্থিক এবং যোগাযোগ সেবা। ভারত যেসব খাতে বাংলাদেশে সেবা রফতানি করতে পারবে- অন্যান্য ব্যবসায়িক সেবা, পর্যটন, ব্যক্তিগত ভ্রমণ ও পণ্য বহন সেবা, টেলিযোগাযোগ, কম্পিউটার ও তথ্য সেবা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা।
দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য উভয় দেশের মধ্যে আন্তঃদেশ ও আন্তঃখাত বিনিয়োগের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো- খাদ্য, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাপড় ও পোশাক খাত, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি যন্ত্রপাতি কারখানা, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল ও ইলেক্ট্রনিক্স, সিরামিক, আইসিটি খাত, ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা, টেলিযোগাযোগ ও বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প।
ভারতের যেসব খাতে বিনিয়োগকে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো- খাদ্য ও পানীয়, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, ওষুধ, প্লাস্টিক ও রাবার পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কাপড় ও পোশাক, পাট ও পাটপণ্য, সিমেন্ট, স্পিনিং মিল, ইলেক্ট্রনিক্স ও ব্যাটারি, ভ্রমণ ও পর্যটন এবং আইসিটি।
বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশে ভারতীয়রা বিনিয়োগ করতে পারলেও বাংলাদেশীরা বিনিয়োগ করতে চাইলে আগে ভারত সরকারের অনুমতি নিতে হয়। ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সমানুপাতিক করার পক্ষে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সেপা’র অধীনে বৈধ বিনিয়োগ ব্যবস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে দুই পক্ষই কাজ করবে, যাতে করে উভয় দেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রবাহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হওয়ার পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে এবং সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থায় সম্পন্ন করা যায়।
সম্ভাব্যতা অধ্যয়নে আরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেই একটি আঞ্চলিক মূল্য শৃঙ্খল (রিজিওনাল ভ্যালু চেন বা আরভিসি) তৈরির সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত সেপা দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের মাধ্যমে আরসিভি তৈরিতে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ ও ভারত নতুন আরসিভি তৈরি করতে পারে বা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, রাসায়নিক, ওষুধ, টেক্সটাইল, চামড়া ও ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতির মতো খাতে বিদ্যমান আরসিভিকে শক্তিশালী করতে পারবে দ্বিপাক্ষিক পণ্য ও সেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে। এ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসনে আরভিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। আর সেজন্য কার্যকর আবহ তৈরি করবে সেপা।
বর্তমান ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। এলডিসি থেকে বেরোনোর পর শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যের সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা আর পাবে না বাংলাদেশ। এতে করে রফতানি বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এই ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ সম্পাদনের ব্যাপারে বেশি মনোযোগ দেয়ার কথা বলছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। তাই দ্রুত না হলেও আগামীতে সেপার মতো চুক্তিতে বাংলাদেশকে যেতেই হবে। চুক্তির বিকল্প নেই। দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে যতটা সম্ভব সুবিধা নিয়ে তা সম্পাদন করতে আগামীদিনের বিষয়টি মাথায় রেখে। সেই চিন্তা থেকেই বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বমূলক চুক্তির প্রস্তাব করে বাংলাদেশ।
এফবিসিসিআই ওই প্রতিবেদনে বলেছে, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) চালু আছে। এর আওতায় শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। সাফটার আওতায় বিদ্যমান সুবিধা আরও বেশ কিছুদিন অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম বাণিজ্য চুক্তি সই হয়েছিল ১৯৭২ সালে এবং এটি ২০১৫ সালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয়েছে। এছাড়া দুটি দেশই আছে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সাফটা) আওতায়। এর অধীনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে।
জানা গেছে, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি থেকে সেপা অনেকটাই ভিন্ন। কেননা, এটি অনেক বিস্তৃত। এর মধ্যে পণ্য ও সেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ব ও ই-কমার্সের মতো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপা স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। উন্মুক্ত হবে বিনিয়োগের নতুন দরজা। তবে বাংলাদেশে ভারতে রফতানির তুলনায় আমদানি পণ্য বেশি হওয়ার কারণে ডাম্পিংয়ের বিষয়টি মাথায় রাখার দাবিও করেছেন কেউ কেউ।
সেপা চুক্তি স্বাক্ষরের আগে একটি যৌথ সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয় এবং সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার পর গত মাসে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয় প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করতে ২৫ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়। এতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং এসব সিদ্ধান্তের ওপর এফবিসিআইয়ের মতামত নেয়া হয়। ইতোমধ্যে এফবিসিসিআই তার মতামত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) ও ভারতের সেন্টার ফর রিজিওনাল ট্রেডের (সিআরটি) যৌথ সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সেপা চুক্তি দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্য, সেবা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পারস্পরিকভাবে লাভজনক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে আগামী ৭ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৩-৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়বে। একই সময়ে ভারতের আয় বাড়বে ৪-১০ বিলিয়ন ডলার।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার, যা চীনের পর সর্বোচ্চ। একই সময়ে ভারতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আনোয়ার উল আলম পারভেজ চৌধুরী বলেন, ভারত তাদের বাজারে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও নন-ট্যারিফ বাধার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে না। সেপা চুক্তির সাফল্য পেতে হলে নন-ট্যারিফ শুল্ক বাধার সমস্যার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিএফটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাবেক বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দিন বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ভারতে রফতানিতে একটু ধাক্কা আসতে পারে। এ জন্যই সিইপিএ করা হচ্ছে। সিইপিএ হয়ে গেলে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি অনেক বাড়বে।
কি আছে এফবিসিসিআইয়ের সুপারিশে ॥ বর্তমানে আসিয়ানসহ সাতটি আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশ। এসব জোটের অধীন দেশের সংখ্যা ১১২টি। এলডিসি উত্তরণপরবর্তী সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় বাণিজ্য বাড়াতে এসব দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার কথা বলেছে এফবিসিসিআই।
এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। এ ছাড়া সাফটা বাণিজ্যের শর্ত কমপক্ষে ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছে তারা। ভারতের সঙ্গে সেপা নিয়ে আলোচনায় একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই টিমে বেসরকারী খাতের প্রতিনিধিদের যুক্ত করার সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই। আলোচনায় সাফটায় যেসব সুবিধা আছে, সেপায় তার চেয়ে বেশি সুবিধা রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই বলেছে, সাফটার আওতায় বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা অব্যাহত রেখে কমপক্ষে ১০ বছর আরও বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। এ ছাড়া অশুল্ক বাধা যাতে দূর করা হয়, সে বিষয়টি সেপা চুক্তিতে যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই।